দখিনের খবর ডেস্ক ॥ জ্বালানি বহুমুখীকরণে সরকারের প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল। আর ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিগত ২০১৬ সালে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয় যুক্ত করা হয়। তাতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের মোট উৎপাদন ক্ষমতার ১০ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ৪৭০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে যুক্ত হবে। কিন্তু গত ৫ বছরে ওই লক্ষ্য মাত্র ৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। জমি সঙ্কট এ পরিস্থিতির জন্য একটা বড় কারণ। পাশাপাশি সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার বা উৎপাদন জনপ্রিয় করা যায়নি। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- স্রেডা থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী দেশে এখন যে পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার মাত্র ৩ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসে। অর্থাৎ সৌর শক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৭১৬ দশমিক ৭৩ মোগাওয়াট। তার মধ্যে পিভি সোলার উৎপাদন করে ৪৬৬ দশমিক ৬৮ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ থেকে আসে ২৩০ মেগাওয়াট, বায়ু থেকে ২ দশমিক ৯ মেগাওয়াট আসে, জৈব গ্যাস থেকে শূন্য দশমিক ৬৩ মেগাওয়াট এবং বায়োগ্যাস থেকে শূন্য দশমিক ৪ মেগাওয়াট আসে। অথচ পরিকল্পনা অনুয়ায়ী নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে এখন ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপান হওয়ার কথা। বতর্মানে বাংলাদেশের সাড়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৬ সালে পিএসএমপি গঠনের পরে সরকার ৫-৬ বছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে থাকা মোট ৩৬টি গ্রিড সংযুক্ত করে সোলার পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ২ হাজার ১১০ দশমিক ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছিল। ওই খাতে ২৬টি প্রকল্পের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। ৮৮ দশমিক ৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ৫ প্রকল্পের ৫০ মেগাওয়াটের ময়মনসিংহ, ৭ দশমিক ৫ মেগাওয়াট কাপ্তাই, পঞ্চগড়ে ৮ মেগাওয়াট, ২০ মেগাওয়াট টেকনাফ এবং ৩ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সরিষাবাড়ি সৌর পার্ক। সূত্র জানায়, গ্রিড সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্যানেল স্থাপনের জন্য বিশাল জমি ও সরঞ্জামের জন্য মূলধনের প্রয়োজন। গ্রীন এনার্জি প্রকল্পে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থায়নের কথা বললেও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান খোলা জমির সংস্থান করতে পারছে না। পাশাপাশি তাদের মধ্যে অনেককেই অপ্রচলিত বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী দেখা যায়নি। প্রতি মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৩ একরের বেশি জমির প্রয়োজন। যে কারণে বড় আকারের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমির সংস্থান করা কঠিন। সেজন্য গ্রুপে সংযুক্ত বাসাবাড়ি, শিল্প-কারখানার অব্যবহৃত ছাদে সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপরে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। কারণ ছাদে সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে। পাশাপাশি স্রেডা মনে করে সোলার সিস্টেম স্থাপনের জন্য অনগ্রিড বিদ্যুৎ গ্রাহককে প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করা হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে উৎসাহিত করবে। সূত্র আরো জানায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্য পূরণ করতে না পারার জন্য নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে প্রতিশ্রুতিরও অভাব রয়েছে। সরকার বিগত ২০১৫ সাল থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছে। প্রথমে বলেছিল ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা। পরে বলা হলো ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ উৎপাদন করা হবে। কিন্ত ওই ১০ শতাংশ অর্জন করতে আরো ২০ বছর লেগে যাবে। কারণ জমির সঙ্কট, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং আমলাতান্ত্রিক মানসিকতাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। ওসব দূর করতে না পারলে লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হবে। সৌর শক্তি, হাইড্রো, বায়োগ্যাস, বায়োমাসকে, জিয়োথারমাল, ওয়োভ এবং টাইডাল এনার্জি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রধান উৎস। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় উৎস হচ্ছে সৌর শক্তি। সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, তার সিংহভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অফগ্রিড এলাকায় স্ট্যান্ড এলোন হিসেবে স্থাপিত সোলার হোম সিস্টেম থেকে এসেছে। স্রেডার তথ্যানুযায়ী সোলার হোম সিস্টেম ইতিমধ্যে প্রায় ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন অতিক্রম করেছে। তাছাড়া ২০১৮ সালে নেট মিটারিং নির্দেশিকা (সোলার প্যানেল বসিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ এনার্জি ব্যাংকে জমা রাখা) শুরু করা হলেও গ্রাহকরা এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সুবিধা পায়নি। এ প্রসঙ্গে স্রেডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দীন জানান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখন টেকঅফ পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বয়ের দিকে জোর দেয়া হচ্ছে। দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা খোঁজা এবং তা কাজে লাগানোর কাজ চলছে। লক্ষ্য হচ্ছে চলতি ২০২১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। ২০১৩ সালের তুলনায় ২০৩০ সালে ২০ শতাংশের বেশি জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে, যা এ সময়ের মধ্যে ৯৫ মিলিয়ন টন অয়েল সমতুল্য জ্বালানি সাশ্রয় হবে।
Leave a Reply